Monday 4 July 2022

পরাজয় ও অভিমানীনির গল্প


মানুষের আপ্রাণ বেঁচে থাকার যে আকুতি তার অবদানে থাকে ভীষণ কষ্ট। যা প্রবল সংবেদী। ভুল করেও পরাক্রমী সমাজবিধির মুখোমুখি হলে তার শিকার ও সৎকার করে ফেলে প্রচলিত  ধারার ও ধারণার নিয়মকানুন গুলি। তাই সতত  বেঁচে থাকা যা নিয়ে সেই নিরন্তর অন্ত:সলীলা ফলগুধারার, জন্ম আর মৃত্যু এই অন্তঃকরণে। নশ্বর দেখের সাথেই বিলীন হওয়াই তার ভবিতব্য.......

        ভালো লেগে যায় আবার, নতুন করে! অবুঝ মায়াহরিণীর মত ভাষা ভাষা চোখে ঝিম ধরে যায়। ভয় হয় চোখে চোখ ফেলতে। কেমন একটা ধুন যেন ওর আসে পাশে জালবুনে চলে নিরবচ্ছিন্নভাবে। ওকে দেখতেই হয় টিফিনের সময় লুকিয়ে লুকিয়ে।আলাপি চোখের নজর এড়িয়ে ওর দৃষ্টিজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেঁচে থাকতে মন্দ লাগেনা। মুখের উপর উপচে আসে হাসির কল্লোল। কে যেন ভেতর ভেতর খুব করে ভাঙন ধরায় মনের আগলে। দিশাহীন সমুদ্রে শুধুই ওর ইচ্ছেই ভেসে থাকি। ওর পাশে বসে খাই। কে যেন ভেতর ভেতর জাদুচালিয়ে বলে ওর সোজাসুজি  বস, ওর খাতার নিচে খাতা রাখ, ওর রঙের কলম কেন.. আরও কত কী ! বলতে পারিনি। সেই যে কে যেন জোর করে বলতে বলেছিল, ভালোবাসি বল। বলিনি। বলা উচিত হয়নি। দৈনিক এই আবর্তনের পালা হটাৎ করে নিভে যায়। কোনোদিন যে কলমটা সে ভুল করে ফেলে গেছিল, পরবর্তী প্রেমের আগে অব্দি সে রোজ স্বপ্ন নামায়।

এই চরাচরের সাধারনত্বের ভিড়ে যে অনাড়ম্বর সুন্দরের উপাখ্যান অনাদরের অনুকম্পা নিয়ে লালিত হয়,তাকে মিলিয়ে নেয়া সহজ নয়। মনের ধরন দরাজ হলে পরেই বেষ্টনীর অজান্তে পরিপুরকের রংমিলন্তি হয়। আর হলও তাই। যে প্রথম গিয়ে নিজের সমর্পনের কথা জানান দেয়, সে এই চোখ। সেই থেকে তার এই অধমের প্রতি অনুভূতি বা তোয়াক্কাহীন চোখে চোখ বলতে গিয়ে পায়ের তলার মাটির উত্থান পতন অনিবার্য হয়ে উঠল।তার আগের পিছের পিচ্ছিল বাতাসে যে আতরগন্ধী মোহ ছিল তার অতলে বার বার ঢলে যেতে যেতে সাঁতরে নিয়েছে মন। তবুও অশান্তির এক অচঞ্চল সরীসৃপ থেকে থেকে উন্মাদ হয়ে হৃদয়ে নিদারুন জ্বালা ধরিয়েছে। তবু গেছি সামলে।
             কোথায় যেন শুনেছিলাম অপ্রাপ্তির একটা বড় মহিমা আছে। রহস্যের যেমনটা থাকে কী ভীষণ সৌন্দর্য! ফিরিয়ে দিয়েছিলে আমায়,আলতো ভর্ৎসনায়। তেমন করে  পড়িনি কখনও। প্রেমে না, free fall এর কথা বলছি। ফলে একটি কি হয় , অপরিণত বয়সের পরিনতিহীন প্রেমে যে দংশন থাকে, যে ক্ষত সময়েরও প্রতিদ্বন্দ্বী।
         লিখব।লেখাটা জরুরি।উদাত্ত কণ্ঠে সত্যের বাঁধ ভেঙে উগরে দেওয়াটা প্রত্যয়ীর একটা পরিচয়।বোধগম্য অনুভূতির ওপারে গিয়ে সূক্ষ চেতনা নিয়ে কাটাছেঁড়া করে তাকে শব্দের রূপ দিতে ও শিখে গেছে ,যখন তার ভাসা ভাসা দুটো চোখ প্রথমবারের তরে সপ্তম বসন্তকে আলিঙ্গন করে ফেলেছিল। সে কথা বলতে গেলে স্মৃতির সারণি বেয়ে সহস্র পথ হেঁটে যেতে হয়।তখন ও একা ছিল।কেউ ছিল না পাশে। একটা আলহাদী কলমের ডগায় মনকে নরম কালীর দোয়াতে ডুবিয়ে স্বপ্নীল ডানায় উড়ে যেত কতখানি পথ তা ও নিজেরও জানা নেই।এলোমেলো আর  উজ্জ্বল দুটো চোখ আর ঠোঁটের সোপান ছাড়িয়ে গালভরা অনবদ্য এক হাসি আজও প্রায় সমকালের গন্ডি পেরিয়ে ওর কাছের মানুষদের মনের বন্দরে নিদ্বিধায় ঘাঁটি গেড়ে আছে।শুধু নেই বলতে ওর সেই টানটান ডগমগ করা জীবনিশক্তিটা। এখন ভীষণ আড়পাগলাটে। পুরোনো একাকিত্বের ছিল ওর নিঃসঙ্গতা। কিন্তু এখন সকলের মাঝে ওর মানায় না।হলুদ বাসন্তী ফুলকে যেমন লম্বা এক খানি সকাল পেরিয়ে দুপুর রোদে যেমন লাগে। বেশ বোঝা যায় ও আর বাঁচতে চায়না। কত বদ্যি-ডাক্তার-বন্ধু -প্রেমিক তো এলো। কিন্তু কি ওর মরে যাওয়া মনকে তুলে ধরা গেলোনা কেন? কি হয়েছিল ওর।কোনো উত্তর নেই সমকালের কাছে। উত্তর একটা ছিল।সময়ের কাছে। কিন্তু অগ্রাহ্য এর আড়ালে সে এখন মরা গাং। আচ্ছা এই গল্পটাকে নাহয় এখানেই উপসংহার টেনে দেয়া যেত।কারণ ক্লাইম্যাক্সটা নিঃসংকোচে বলে দেয়া যায়।কিন্তু এখান থেকে গল্পটা শুরু হচ্ছে।একটু রয়েসয়ে খুলতে হচ্ছে স্মৃতির মোড়ক.....(চলবে)