Saturday, 22 January 2022

সযত্নে

দাদুকে লেখা চিঠি। লিখেছেন মাষ্টারমশাই বিজয় জানা।
" মুকুটটাতো পড়েই আছে, রাজাই শুধু নেই।"

Friday, 21 January 2022

প্রেমের সাতকাহন


           খুব পুরোন হয়নি সেই সব দিনে

         দুপুরের গলিটা কাক ডেকে ডেকে ক্লান্ত হত যখন

     পৃথিবী তখন দিনের বাস্ততা থেকে একটুকরো নিয়ে

 জানলার আমগাছের ছায়াটা যে অন্ধকারের হাতছানি দিত

ঐখানে চুপটি করে জিরিয়ে নিত একপ্রস্থ

  তারপর বিকেল হওয়ার নামে কখন সখনও সকাল হত

    বাড়ির থেকে একমুঠো ভীতু চোখেরা আলতো দরজা ঠেলে

         ইচ্ছে গুলো নিয়ে বেরিয়ে আসতে একরত্তি স্বপ্নকে আঁচলে ভরে

             তারপর আলতো দুটো পা- পিঠ অব্দি  কালো চুলের পাঁচিল

                  নিয়ে সে গিয়ে খোঁচা দিত পাশের বাড়ির জানলায়,

                      আর ফিসফিসিয়ে নামধরে ডাকতো যেন কাকে!

                           সে সব দিনে  আমি diary লিখে কাটাতাম

           তারপর দিনকে হাতঘড়ি করে মেয়েটি বড় হলো

        কথা বলতো যেন পৃথিৱীতে আমাদের বোবা হলেই চলত বেশ

    সবকথাদের একটা প্রচ্ছন্ন ইচ্ছে থাকতো 

    ওর মুখ দিয়ে বলতে চাওয়ার

   ওই দিনগুলো আমারও তেমন করে মনে নেই

  নামগুলোও কেমন যেন জটপাকিয়ে গেছে

পুরোনো ইতিহাসে লেখা নেই সেসব আর,

  চটজলদির ভিড়ে সেসব সাফ হয়ে গেছে


   দেখা হলো আবার অনেক বছর

     সেই ছোটকালের আবছায়া সব কথায়

      বেশ চেনা ঠেকেছে ,আগের সেই দিনগুলি

       রোজকার ডাইরির পাতা,জানালা,ছায়ানা

         কোথায় যেন দেখেছি….খুব চেনা!

         একদিন বাবার সাথে হাত ধরে মেলায় গিয়ে

           একেই তো দেখেছিলাম!

             বেলুন আর পুতুল নিয়ে বায়না করেও শেষে

              চোখের জল নিয়ে ফিরে  যাওয়া সেই  মেয়েটি!

                                      

           …ওরা ছেড়ে দিলো আমাদের পুরাতন পাড়ার বাড়িটা

         রোজ জানলা দিয়ে যাকে দেখবো বলে

       দুপুর বিকেল এক করে সন্ধ্যা নামাতো যে ছেলেটি,

     আজ সেই মেয়েটি আবারচোখের সমস্ত দৃষ্টি জুড়ে

   ছোটবেলায় কি ছিল জানানেই !

তবে আজ কেমন  হচ্ছে মনের ভেতর

 তাকাতে পারলোনা বেশিক্ষন

  কাছাকাছি এলে পরে..

    ভালোলাগার জানলাটা যায় খুলে

     যেন হুড়মুড়িয়ে বাতাস এলো, সাথে সেই আমের দুপুর

        ফিসফিসিয়ে কথা বলা রেলিঙের সবটুকু

         দৌড়ে গিয়ে সে তার ছোটবেলাকার ডায়রী নিয়ে

           পাগল করে দেখল-খুঁজল-পড়ল

             কিন্তু কোথায় সেই লেখা!একবার জিজ্ঞেস করলে হতো না?

                   - মেয়েটি সেই কিনা?


               কথায় কথায় বাবা বললেন,ওদের কথা

             ডায়রীটা আছে মায়ের আলমারিতে

           মা পড়তেন আমার কাঁচা হাতের অক্ষরে লেখা diary

         আর মাঝে মাঝে আমাকে অবাক করে কাউকে দিয়ে ,

     গল্পের বই অনিয়ে উপহার দিতেন

আমিও জমিয়ে লিখতাম

আজ আবার সেই ডায়রী খুঁজলাম যখন

 মা কেমন একটা অদ্ভুত হাসি হাসলেনতারপর

  বললেন, জানতাম..একদিন তুই চাইবি এগুলো

   তাই রেখেছি যত্ন করে লাল কাপড়ে মুড়ে

    তর সইলো না সবকটা পড়লাম

     একনিঃশ্বাসে  সেই পুরোনো খাটের ওপর এলিয়ে

     তারপর ওটা রেখে দিলেম পাশে

      মন ভরে খিলখিলিয়ে হাসলাম

        কি না লিখেছি-ভেবেছি-হাবিজাবি সব

     তারপর হাওয়া দিতে একটু একটু করে চোখের পাতাভারি হয়ে এলো

    সেই হারানো বিকেলের  গল্পের আসার মুহুরত গুলো                                                                          অনুভব করলাম অবচেতনে


     তারপর আর কী..!..দিন পেরিয়ে যাচ্ছে হুস হুস করে

        পাল্লা দিয়ে নাবলা প্রেম..

         যে প্রেম কোনো দিন প্রেমিকার কথা শোনেনি বা

        একটা বাক্যও বলতে গিয়ে আটকে গেছে ঠোঁটে,

তারা ভেতরে ভেতরে প্রেমের সাম্রাজ্য গড়ে....



পাগলামি

Wednesday, 19 January 2022

এক যে ছিল অন্তরালে

শীতকাল আমার ভীষণ প্রিয়। কেন যে এমনতর ভালোবাসা জানিনা। কোনো শীতের রাত্রে, পৌষালী হাওয়ার হিমেল আবেশে ভেসে ভেসে আমার আগমন বার্তাটি এনে দিয়েছিল বাড়ির লোকজনের কাছে। সে প্রায় আঠারো বছর আগের কথা। ছোটবেলায় নাকি আমাকে বিশেষ করে শীতকালে সর্ষের তেল মর্দন করে ফেলে রাখা হত উঠোনে। সেই থেকে সোনালী রোদের সাথে আমার সখ্যতা। এ বিষয়ে আমার অনুজও কম জাননা। সূর্যিমামার ওপর একক অগ্রাধিকার সইতে না পেরে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনিও ভূমিষ্ঠ হলেন এই ধরাধামে। রৌদ্রকরোজ্জল দিন গুলিতে সেদিন থেকে তিনিই হলেন আমার খেলার সাথী। সে যাইহোক, অনুজের কিন্তু শীতকালটি একদমই উপাদেয় নয়।কারণ শীতকালীন ঝঞ্ঝা ; অর্থাৎ সর্দি কাশি ইনার ওপর সেই সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে শুরু করে এখনো স্বমহিমায় বিদ্যমান। এবুঝি আমার শীতকাতুরে ভালোবাসায় ভাগবসানোর জন্য সূর্যিদেবের শীতল অভিশাপ।ফিরে আসি মূল কথায়। সেই যে রোদ্রে পুড়ে সোনার মত খাঁটি হলাম, তাই থেকে শীতের সাথে আমার অবৈধ ভালোবাসা। অবশ্যই ভালোবাসি বলে এই নয় যে বুকে বেঁধে রাখি! সোয়েটার, হনুমান, টুপি, দস্তানা, মোজা সবই থাকে আমাদের মাঝে।
বেশ মনে পড়ে কিশলয় এর সেই ছড়া “উঃ আঃ কেন কর, শীত লাগে তো গানটি ধরো” শীতের কবলে পড়ে গান ধরার মত দ্বিতীয় টোটকা বোধকরি ইহজগতে আর দ্বিতীয়টি নেই। যত শীত তত জোরে গান।তখন ভোরে ওঠার অভ্যেস ছিল। এগুন আমার পিতামহের থেকে প্রাপ্ত।কতটা জাত কষ্টসহিষ্ণু হলে পরে লেপ কম্বলের মায়া ত্যাগ করা যায় সেকথার খোঁজ রেখেই বা কজনা।তবে যদি এককাপ bed tea পাওয়া যায় তখন শীত বেটা বেমালুম উধাও হয়ে যায়। মনে হয় যেন গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় এসে গেছি। খড় দিয়ে আগুন পোহানো হত ।সবচেয়ে যে সমস্যাটা ছিল সেটা হলো যতক্ষণ আগুন ততক্ষণ  আরাম। তারপর যে কে সেই। কখনও দাদু বিছানা থেকে তুলে দিয়ে চলে গেলন। ব্যাস! লেপের ভেতর আবার ঢুকে দে ঘুম। যতক্ষণ না মা-জননীরচিল চিৎকারে বাড়ি মাথায় উঠত, ততক্ষণ কি অনুপম স্বর্গসুখ বিরাজ করত ঘুমঘোরে।
শীতের ফুলকপি খেতে কি ভালোটাই না লাগতো। মা তরিতরকারির খাতিরে সেদ্ধ ফুলকপি নুন তেলে ছেঁকে থালায় তুলে রেখে যেইনা অন্যমনস্ক হয়েছেন অমনি দু তিন পিস গপাগপ ভ্যানিশ। এজন্য কম বেগ পেতে হয়নি!অনেকবার লোভের চোটে যেইনা গরম জিনিসটা চালান দিয়েছি অমনি জিভের পো পুড়ে একশা কান্ড।মনখুলে চিৎকারও করতে পারিনে। চুরির মাল কিনা!ধরা পড়লে আর রক্ষে আছে। মাঝে মাঝে অসাবধানতা বসত ধরা পড়ে গিয়েছি থালার ঝঞ্ঝনানিতে তে। কিন্তু চুরিতে ভাটা পড়েনি কোনো দিন।
যখন ধান তোলা হত মাঠ থেকে তখন আরেক মজা।দাদুর সাথে যেতাম লক্ষ্মী ঠাকুর আনতে। দাদু মাথায় নেবেন আর আমি চলবে সামনে জলের ছড়ি দিতে দিতে। আর ছোটভাই চলবে ধেই ধেই করে নেত্য করতে করতে।শুধু বলবে “আমায় দাও আমায় দাও। আমিও মাথায় নেব” শাঁখ বাজানোয় আমি পারদর্শী ছিলাম।অগত্যা পথিমধ্যে সেই দায়িত্ব মাঝে মাঝে বন্টন করে নিতে হতো।…ধানঝাড়াইএর সময় তেমন মজা না থাকলেও ঝাড়াই করা খড় নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে।ঝাড়াই করা খড় চাই করে ফেলা হত খামারে । পাড়ার সমবসয়সী ছেলেমেয়েদের আমদানি হত সেখানে।চলত ডিগবাজি দিয়ে গড়িয়ে পড়া, মারপিঠ,হইহুল্লোড়, হরেক রকমের কসরত । সর্বোপরি খড় সাজিয়ে চৌকো খোপ বানিয়ে লুকোচুরি খেলা।মাঠ থেকে ধান উঠে গেলে সেখানে পিচ করে মাসের পর মাস ব্যাট পেটানো।
সবচেয়ে বড় পাওনা ছিল শিউলি আর সিতাহরণের ফুল। এত সুগন্ধি ফুলগুলো চন্দ্রালোকিত বনজ্যোৎস্নায় যখন ওই পথ দিয়ে হাঁটা দিতাম কেমন করে যেন মোহাবিষ্ট হয়ে পড়তাম। সকালের ঘাস বিছানো রাস্তায় সাদা হয়ে পড়ে রইতো শেষ রাতের ঝরাফুলগুলো।সঙ্গে করে ম ম করা সুবাসে ভরপুর চতুর্দিক। আহঃ কি অনন্য সেই অনুভূতি। অতঃপর শীত যখন এসেই পড়ে তখন বসন্তের আর অপেক্ষা কিসের! 
(২৭শে নভেম্বর, ২০১৬)
◆আপাতত এই অব্দি বলে আমার diary থেমে গেছে।একদিন সময় পেলে HRI এর দিন গুলো নিয়েও লিখব।আর ছবিটা ©"শ্রীতমা" দির থেকে অনুমতি নিয়ে নেওয়া। এখানের দিনগুলোর সাথে ওই দিনগুলো কেমন যেন  ওই ছবিটা দিয়ে জোড়া!

Saturday, 8 January 2022

Singularity


সময়ের ফের
--------*---------
           চলে যায় তরী
        পৃথিবীর শুন্য ঘাটে,
         চলকে পড়ে জল
 ঠিক যেন আগের জনমগাথা
ছলাৎ ছলাৎ এসে ফিরে যায়।
       সেই নামেতে আবার
       ছোঁয়াচ মেপে ফিরছে
       সেই সুর ,সেই কথা।
 কবেকার ভীষণ সে অন্ধগলি,
 রাজপথ ডিঙিয়ে নীরব সময়ের 
      একদুপশলা মেঘবৃষ্টি এনে,
      থমকে গেল জনারণ্যে।
 সেও হবে কোন এক নিশাচর
 সময়  কেনে ফেরে , না জানি কোন
      অগাধ জন্ম আগে থেকে।
      অদ্যবধি দুঃস্বপ্ন ছিল,
   ছিল অন্য এক জীবনবোধ,
    অতঃপর হল শিলালিপি।

      13th May,2019


Friday, 7 January 2022

জায়গা বদল

বেলা পড়ে আসছে। গেস্ট হাউসের ৩০৫ নম্বর ঘরের স্বচ্ছ কাচের জানালা দিয়ে বিকেলের এককুচি রোদ এলিয়ে পড়েছে আড়াআড়ি করে উঠোনের ওপরে ।চেয়ারটায় বসে তার মিঠে আদরের স্পর্শসুখ মোটেই মন্দ ঠেকছে না। অফিস-কাঁচারী-ক্লাস রুম-মেশ-মেশিন হইহুল্লোড়ি ভাবভঙ্গীর ঠিক বিপরীতে, ঠাট-বাটহীন অনাড়ম্বর ছন্দে গাঁথা এরকম একখানি নির্জন প্রেক্ষাপট ঠিক কবে থেকে আমার তরে সাজানো ছবি হয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল ছিল জানা নেই! দিনান্তের এই লাল সূর্যমাখা আকাশের নীচে একফালি সবুজ ঘাসের লন ।তার ওপর ক্ষণে ক্ষণে যে কত নগন্য সবগল্পের বুনন চলছে অজ্ঞাতসারে, তার হদিশ নেই কারুর কাছেই।ওই তো ওর ওপরই ঝগরুটে ছাতারের দল রাজত্ব করে বেড়িয়ে গেল সন্ধ্যেবধি। শীর্ণ পেয়ারা গাছের ছায়ার অন্দরে কাঠবেড়ালির চঞ্চলখেলায় জমে উঠলো ভরদুপুর।তারই মাঝে মাঝে নিত্য অবসরে পুঁচকে দোয়েল পাখি এডাল-ওডাল করে, জমানো কথা হাঁকিয়ে চলে গেল বেশ। ল্যাজচেরা জাঁদরেল ফিঙে খানদানি style এ এসে ফাঁকা চেয়ার গুলোর ওপর বসে, এদিক ওদিক খানিক নিরীক্ষণ করেও কোন শত্রুর ঠিকানা না পেয়ে নিরাশ ভাব নিয়ে উড়ে চলল..। সবজে টিয়ারা সদলবলে পেয়ারা গাছের ওপর বসে একে অপরকে খিস্তি খেউড় করে বেমালুম উবে গেল যেন..। তারই ফাঁকে নির্জনতার সুযোগ নিয়ে একজোড়া common quail এসে চুটিয়ে প্রেম করে যায় রোজ। এদিকে ইতিউতি মালির নিপুন হাতে গড়া পাতাবাহারি গাছ সুচারু ভাবে ছাঁটা।সেই সাথে কিছু সাদা করবীর ফুল ফুটে আছে  কবে থেকে! পাশেই snake plant এর টব।তার ওপারে কোন অনাগত অতিথির জন্যে পাতা কিছু বেতের গার্ডেন চেয়ার-টেবিল অবহেলায় পড়ে থাকবে আরও কিছুদিন। ওদের একাকিত্বে দিগন্ত আড়াল করে রাখা কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়ার হলুদ-লাল ফুল স্বস্তি দেবে খুব। সেই গাছেদের সারির ওপারে ভালো করে দেখলে পরে বোঝা যায়  হঠাৎ করে উপত্যকার মত নেমে যাওয়া ভূমিরূপের বঙ্কিম খেয়ালী ভাব। সেখানের শুকনো ঝোপের আড়ালে-আবডালে লাজুক শেয়ালের দল ঘুরে বেড়ায়,কখনওবা হাঁক দিয়ে যায় সন্ধ্যা প্রহরে।এসব ছাড়িয়ে দূরের দিকে তাকালে যেন মনে হয়,সবুজ শ্যামলীমা মাটির মমত্ব ছাড়িয়ে আকাশের অনন্ত সুনীল দিকশূন্য উপাখ্যানের পানে ধেয়ে না চুমে অব্দি ক্ষান্ত হয়নি।হয়ত ওর ওপরেই অদৃশ্য পর্দার আড়ালে চিরায়ত গঙ্গা বহমান। তার আর্দ্রতার আভাস যেন মিহি অতরগন্ধী মোহের আতিশয্যে বুঁদ করে রেখেছে চারপাশ। পৃথিবীর সব আলো স্তিমিত হয়ে আসে তার রেশে।তবুও চিরাচরিত গল্পের মত এখানে দূরে কোন গ্রাম নেই, যেখানে জ্বলে উঠবে সন্ধ্যা প্রদীপের আবেশ।নিঝুম বনপথের অন্দরে-কোন্দরে শ্বাপদের রাজত্বের গাঢ় আধার যেভাবে ঝুপ করে নেমে আসে নিয়ম করে রোজ,কোনো মতেই তার অন্যথা হওয়ার জো নেই। সেই কুহকের আড়ালে চলে ভিন্ন যুগের ভিন্ন কালের মায়াবী রাজত্ব । সীমান্ত কাঁপানো অভ্রভেদী উদ্দাম ঘোড়ার মত মত্ত বাতাস এসে গায়ে লাগে। অপ্রকৃতিস্থ-অতিপ্রাকৃত-অতিপ্রাচীন ভাব যেন ঘিরে ধরে চারদিক। পরাজয়ের সন্ধি হিসেবে পৃথিবীর সব আলো যেন ফিরে যাচ্ছে , পেছনে পড়ে থাকে পুরু অন্ধকারের পাড়।সেই সঙ্গে ঝিঝি সাঁঝপাখির বরাভয় ডাক দিয়ে  আদিমতম রাজত্বের সূচনা হচ্ছে। পাতায় পাতায় মর্মরিয়ে ওঠা উলু ধ্বনি যেন তারই আভাস। মানুষেরও বহু আগে থেকে ঘটে আসা সেই পদধ্বনি যেন তাদেরই সারা রাতের আয়োজন।

পুনশ্চ: এই ছিল আমার আজকের ডায়রী। HRI তে বসে।সাতদিন হল নিভৃতবাসে আছি। কঠিন  সময়ের মাঝে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কঠিন হাত,মানুষের প্রতি মানুষের সাহায্যের হাত বাড়ানোর বন্ধুতা গুলো চিনে নিতে পারা কম উপলব্ধি নয়! শুধু যার ওপর ভর করেই মানুষের আরও হাজার বছর ঠেকায় কে! এই যে বিশ্বাসের ভূমি তারই কয়েকটা স্টেশন এর নাম অদিতি ,থাঙ্গা ,প্রজাপতি, বানওয়ারীসহ কোটি কোটি মানুষ যাদের নামও হয়ত জানব না কেউ ,তাদের জন্যে করোনা কেন আরও ভীষণ মহামারীও হারবে। হারতে বাধ্য। সবাই সবার হাত ধরুন।

সবশেষে এই গানটা:-
"বল কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী 
পার হয় তোমাকে ধরে
দুর্বল মানুষ যদি"
স্থান: HRI- Guest House, ৩০ শে এপ্রিল,২০২১,
ছবি: এলাহাবাদী গঙ্গার।

ছুটকি

ছুটকী সেদিন সেই পুকুরে জল ভরতে গেছে।চারিদিক নিরুত্তাপ- নিঝুম। নিঃস্তব্ধ দুপুর।রোদ্দুর এসে পড়েছে বটে। তবে সে গাছের গা-আড়াল করা রোদ্দুর। বসন্ত বৌরী আনমনে ডেকেই চলেছে।পুকুরের পাড় দিয়ে ডাহুকের নিঃস্তব্ধ চলার পথ হঠাৎ ওর আগমনে শঙ্কিত হয়ে থেমে যায়। জলের দিকে ঝুঁকে পড়া গাছের ডালে বসে নীল মাছরাঙা অট্টহাসির ফিনকি দিয়েই হঠাৎ উধাও! ছুটকি একদৃষ্টে চেয়ে থাকে..। চারিধারের ঘন বনানীর প্রতিবিম্ব বিম্বিত হয় স্বচ্ছ কাচের মতো জলে। ওর মনে হয় ওই বিম্বিত ছায়া রোদের বনানী যেন মায়াবন। মায়াহরিনীদের সচকিত চাহনি যেন সে অনুভব করে নীরবে আনমনে। সমগ্র পৃথিবীর নৈঃশব্দ যেন ওর সঙ্গী।জগতের সমস্ত তোলপাড় করা অনুভূতি ওর মনে অনুরণন তোলে...
             জানালাটা দুপুরের ভীষণ রোদের ঝাপ্টানিতে বন্ধ করতে গিয়েও হাতটা সরল না।ছুটকিকে দেখলাম সেই একভঙ্গি তে,কাঁখে কলসি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে! কেন এমন হলো জানিনা! ছুটকী আজ নেই। প্রায় ওর না থাকাটাও হল বিশ বছরের।জানালাটা আর খুলি না। শেষ বারের মতো বন্ধ করে দিয়েছি -নিঃশব্দে। 
   (২০১৮)
ছবি:HRI

আবহমানতা

চলে গেছে যুগ অন্তরালে রেখে সময়ের কবিতা বই।
ছাপা হাতের অক্ষরে লেখা ঠিকানায়
পড়েছে ইটের কুচির মত রং,
সন্ধ্যার টিমটিমে আলোর নিচে
মহাভারতের পৃষ্ঠা গুলো এখনো এলোমেলো, পুরাতন হাওয়ায়।
একছুটে মাঠ পেরোতে পারতো 
 যে ইচ্ছে নদীর মত ছোটো ছেলেটার মন,
শীতের শিহরণে,তার সতর্ক কানে গল্প আসে ঠাকুরমার ঝুলি হতে।
ভোর হওয়ার আগেই চুরি হয়ে যায় ফুলের মধুর মতো
খেজুরের ভাঁড় থেকে টইটম্বুর রস।
দূরে ওই চালা ঘরে এক সুরে জল পড়ে পাতা নড়ে
কোথায় যেন মধুকুঞ্জে বাঁশি বাজে উদাসী প্রহরে
…হল্লা হয় ,সন্ধ্যা কেটে পরের দিন যে সূর্য ওঠে
দিন গুলো সব দিন ভুলে যায়,আর চায় না ফিরে পেতে।

গীডারের জন্মদিনে

শুভ জন্মদিন। দেখতে দেখতে ১৮ বছর হয়ে গেল এই গল্পটারও। ঝাউ ছাতিম এর ভূতিয়া গালগল্প, ইস্কুল ঘরের মাটির দাওয়ায় বসে পুরনো বিলেট দিয়ে কাচা আম, কাগজফুলের গাছ, শিশু গাছের গোড়ায় ছাল তুলে পানের পসরা নিয়ে বসা, আকাশপানির ফল দিয়ে সাবানের ফেনা, আজানা ফুলের রেণু দিয়ে উদুম হাচি, ইস্কুলের মাঠের পাশের  কাচের মত স্বচ্ছতোয়া জল ছুটছের দৃশ্য, শীতলা মাড়য় বটের ঝুরি ধরে ঝুলা, খুপরি ইঁটের ভেতরে দুটাকা পাওয়া, কিংবা রান্নাবাটি-পাচঘুটি - অস্টা- কিতকিত- বৌমারি - ফুলফল- মাংসচুরি-কুকলুকানি- পাতালুকানি- মেলা রে মেলা - কইড়া - গিল্লি - গুলি - চম্পাই - পিন্টু- ক্রিং ক্রিং থেকে ক্রিকেট...সবকিছুর জন্যে ❤️ এজীবনে এগুলো ভাগ করে নেওয়ার মত  মানুষেরা সংখ্যালঘু, এস্বাদের ভাগ ও হয়না তেমণকরে!! সবশেষে জেঠিমার মিড ডে মিলের রান্না করা আলুভাতে আর সয়াবিনের তরকারিটা আজ অব্দি মুখে লেগে আছে। ঐরকমটা আর হবেনাকো কক্ষনো !

কেরোসিনের বাতি

উদরের জ্বালায় আজ বস্তা খেলাম

রাস্তার সস্তা মাংস কষা শুঁকে,

ফ্লাইওভারের মশারি টাঙিয়ে তিনটে দিন,

ঝম ঝম বৃষ্টির আতর গায়ে লাগলাম যেই;

দেখি সবাই এলিয়ে পড়ছে গায়ে

পায়ে লাগবি লাগ,দেব জুতোয় মাড়িয়ে!

চিৎকার শুনে বাবুর যদি ঘুম ভেঙে যায় মাঝরাতে;

ঘুমপাড়ানি রাতকুকুরের দল ভেবে আবার পাশফেরে!

সেয়ানারা বেশ হাঁক পাড়ছে,খাবার ছড়াচ্ছে ইতিউতি,

এসে পরে একটু ঠোঁটে নিয়ে যাও,বাড়ির বাচ্চা খাবে

তুমিও খাও,পাখিও খায়,খায় এটো কুকুরের দল,

তোমার ভেদবমি হলে ওই কি যেন বলে-

কুকুরের পেটে কি আর ঘি ভাত সহ্য হয়!

 

চল যাই,তুমিও আমি পাশাপাশি,

ঠিক ভেবেছ ,শহর চেনো(!) তাই তো মানুষ নিয়ে হাসাহাসি

অনেক হয়েছে যখন ,এবার তবে দেয়াল লিখি :

তিনটে দেয়ালে লিখলাম ,তিন সত্যি-

আমি চোর, আমরা চোর, ওরাও চোর

..একা একা ঘুরি বাউন্ডুলে ,আর দেয়াল লিখি

একদিন শেষে আদেশ এল চিঠির বেশে-

অনেক  সে চিঠি  শেষে শুনি অন্ধ পেয়াদা পড়তে পারে না!

পড়ার জন্য আমায় ডেকে, শেষে আমায় দিলে রাজদ্রোহের সাজা

আমি শুধু মরার আগে বলতে গেলাম

রূপকথার রাজকুমার! তোমরা তো সব জন্মেই বোবা !”

(11th june, library HRI,1pm)